
আগামী নির্বাচনে শ্রমিকরা চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের প্রত্যাখ্যান করবে : মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরের ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের গতিপথ পাল্টে দিবে। এই নির্বাচনে শ্রমিক-জনতা ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস রচনা করবে। আগামী দিনে তারা দখলদার, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করবে।
তিনি আজ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের পতেঙ্গা থানা কর্তৃক আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা সভাপতি মোঃ মইন উদ্দিন-এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান ও জামায়াতে ইসলামী মনোনীত চট্টগ্রাম ১১ আসনের প্রার্থী মোঃ শফিউল আলম।
মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিগত ৫৪ বছরে শ্রমিকরা সর্বক্ষেত্রে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শ্রমিকদের রক্ত ঘামে এই দেশ পরিচালিত হলেও তাদেরকে ন্যূনতম মূল্যায়ন করা হয়নি। নামকাওয়াস্তে তাদেরকে মজুরি দেওয়া হলেও বিনিময় কয়েকগুণ খাটিয়ে নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের পরিশ্রমের ফসল তুলেছে কতিপয় মালিক ও রাষ্ট্রক্ষমতার সুবিধাভোগীরা। তারা শ্রমিকদের ব্যবহার করে নিজেদের জীবনমান উন্নতি করেছে।
তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে ৫৪ বছরের হিসাব বুঝে নেওয়ার। আর কোন শোষণ তোষণ নয়। এবার শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য তাদেরকে নির্বাচিত করবে যারা ব্যক্তি জীবনে ইতিমধ্যে সততা ও ন্যায়ের পরীক্ষায় পাশ করেছে। যারা কোনদিন কোন ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে ছিনিমিনি খেলিনি শ্রমিকরা এবার নির্বাচনে তাদের পক্ষে রায় দিবে। আজকে সারাদেশে যেভাবে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের পিছনে সাধারণ মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে তাতে আমরা আশা করছি এই নির্বাচনে দেশের ইতিহাস নতুন করে রচিত হবে। যারা আমাদেরকে থামিয়ে দিতে চায় তাদের একদল ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আগামী দিনে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের মত ভূমিকা গ্রহণ করবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে। আগামীর বাংলাদেশ সততা ন্যায় ও ইনসাফের বাংলাদেশ হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এস এম লুৎফর রহমান বলেন, অগণিত শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রতাপশালী স্বৈরাচার সরকার তার দলবল নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ বিপ্লব পরবর্তীতে নতুন বাংলাদেশ নিয়ে আশান্বিত হয়েছে। শ্রমিকরা আশা করছে বিপ্লবের পর তারা একটি জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ পাবে। একজন নারী তার সতীত্ব নিয়ে নিরাপদে বসবাস করবে। শ্রমিকরা আশা করেছে শিল্প কলকারখানায় এতদিন তারা যে অধিকার বঞ্চিত ছিল সেই অধিকার ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা লক্ষ্য করছি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা নতুন করে দেশের শিল্প কলকারখানা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তারা চট্টগ্রামসহ সারাদেশে কারখানাগুলোতে অগ্নিসংযোগ করছে। শ্রমিকদের মাঝে ষড়যন্ত্র করে বিরোধ সৃষ্টি করে কারখানা বন্ধ করছে। চট্টগ্রামে প্যাসিফিক জিন্সের বৃহৎ ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। আমরা মালিকদের সাথে কথা বলে ২৯ হাজার শ্রমিকের রুটি রুজি চালু করেছি। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দেশপ্রেমিক শ্রমিক সংগঠন। এদেশের মা ও মাটি রক্ষার জন্য এই সংগঠন অতন্ত প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। আমরা প্রতিটি সেক্টরের শ্রমিকদের অধিকার আদায় আপোষহীন। আগামী দিনে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সৎ দক্ষ ও দেশপ্রেমিক প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবো।
সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, চট্টগ্রাম ১১ আসন মূলত শ্রমিকদের আসন। নগরের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষ এই আসনে বসবাস করে। আমি বিশ্বাস করি অধিকার বঞ্চিত এ বিশাল জনগোষ্ঠী আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ভুল করবে না। শ্রমিকরা জানে কারা তাদের টাকা ও অর্থ সম্পদ মেরে খায়। শ্রমিকরা আরও জানে শহরের টেম্পু স্টান্ড বাস স্ট্যান্ড কারা দখলে নিয়েছে। কার লোকজন বিগত সরকারের দখলদারদের ন্যায় নতুন করে দখলদারি শুরু করেছে। চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি যাদের নিত্যদিনের অনুষঙ্গ শ্রমিকরা তাদেরকে এবার লাল কার্ড দেখাবে।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি মূলত সেবক। আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধি মানে সেবকের বিপরীত। নির্বাচনের আগে হাত জোড় করে ভোট চাইলেও নির্বাচিত হওয়ার পর শ্রমিকরা তাদের দেখা পায় না। এই সমস্ত প্রতারকদের আর নির্বাচিত করে রাষ্ট্রকে উল্টো পথে চলতে দেওয়া যাবে না। বরং শ্রমিক জনতার রক্তের উপর যে নতুন স্বাধীনতা দাঁড়িয়েছে তাকে পূর্ণ মূল্যায়ন করতে হবে। আগামী দিনে সৎ ও খোদা ভীরু নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমাদেরকে মনোনিবেশ করতে হবে।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের নগর সহ-সভাপতি নজির হোসেন,জামায়াতে ইসলামী ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ, ফেডারেশনের ইপিজেড থানার সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম, বিপিসি তেল সেক্টরে সভাপতি আবু নাঈম সুজন, ৪০ নং ওয়ার্ড উত্তরের সভাপতি জামাল উদ্দিন, ৪১ নং ওয়ার্ড সভাপতি জসীমউদ্দীন প্রমুখ।