৫ দফা গণদাবী বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নিকট জামায়াতের স্মারকলিপি প্রদান
মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, চট্টগ্রাম অফিস :
চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর ও দক্ষিণ) জামায়াতের উদ্যোগে ৫ দফা গণদাবী বাস্তবায়নের দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে জেলা পরিষদ চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপি প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম অঞ্চল টীম সদস্য জনাব জাফর সাদেক, প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমীর আলাউদ্দিন সিকদার, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, জেলা সেক্রেটারী যথাক্রমে অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, আব্দুল জব্বার, মহানগরী এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জনাব মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, জেলা এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট আবু নাছের, সাংগঠনিক সেক্রেটারি যথাক্রমে সীতাকুণ্ড আসনের নমিনি আনোয়ার ছিদ্দিক চৌধুরী, মাওলানা নুরুল হোসাইন, কোতোয়ালী থানা আমীর আমীর হোসাইন, সাতকানিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইব্রাহিম চৌধুরীসহ জেলা উপজেলা নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপিতে উল্লেখ করে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। জাতির প্রত্যাশার আলোকে আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে কতিপয় রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় সেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে
আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে সরকারের
কাছে লিখিতভাবে দুইটি প্রস্তাব করেছে। প্রথমত: জুলাই জাতীয় সনদের জন্য “সংবিধান আদেশ” জারি করা, দ্বিতীয়ত: এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের পূর্বে গণভোট প্রদান করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা। সেটা না হলে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।
নেতৃবৃন্দ আরও উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু,
নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশীশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা
বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, বিগত সরকার বিভিন্ন স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করে ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দের উপর জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলা, জেল-জরিমানা, গুম, খুন করে দেশপ্রেমিক কন্ঠকে স্তমিত করতে চেয়েছে। দিনের ভোট রাতে নির্বাচনের নামে জাতীর সাথে প্রহসন করেছে। আর এ সমস্ত অবৈধ কার্যক্রমগুলোকে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল শুধু প্রকাশ্যে সমর্থনই দেয় নাই বরং জুলাই-আগস্ট অভ্যূত্থানের সময় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই স্বৈরচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে জনগণ জোর দাবি জানিয়ে আসছে।
আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক
দলসমূহ দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ সেপ্টেম্বর মাসে ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ, বিক্ষোভ ও গণসংযোগ করেছে। এ সমস্ত কর্মসূচীতে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র ৫-দফা দাবিসমূহ:
১। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত
আদেশের উপর গণভোট আয়োজন করা
২। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা
৩। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা
৪। ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা
৫। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
আমরা মনে করি উল্লেখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়িত হলে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে যা বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় আসীন করবে।
তাই আমরা জনগণের পক্ষে উপরোক্ত ৫-দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বতীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।