প্রতিদিনের মতোই এক কর্মব্যস্ত সন্ধ্যা। বনানীর কাকলির মোড়ে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সোহাগ(ছদ্মনাম) । ঠিক তখনই চোখে পড়লো এক অদ্ভুত দৃশ্য। এক শিশুপুত্র বাসের জানালায় কিছু একটা দিয়ে মুহূর্তেই লাফিয়ে নামলো এবং চলন্ত বাস থেকে ফিরিয়ে নিলো ১০ টাকা।
শিশুটি ছিলো লজ্জাশীল, চোখে কৌতূহল, মুখে মুচকি হাসি। তার হাতের একটি গামলায় সাজানো ছিল প্যাকেট করা—‘আমড়া’। কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করায় প্রথমে লজ্জা পেলেও ধীরে ধীরে জানাল তার নাম আব্দুল রহিম। ছোট্ট এই হাতেই খাবার তুলে দিচ্ছিল পথচারীদের হাতে, নিজের মায়ের হাতে বানানো সেই খাবার।
লবণ দিতে গিয়ে তার হাত কাঁপছিল। হয়তো নার্ভাস, কিংবা হয়তো এতটুকু বয়সে এত দায়িত্ব সে এখনও মানিয়ে নিতে পারেনি। এমন বয়সে যেখানে শিশুরা খেলাধুলা আর পড়াশোনায় মেতে থাকে, সেখানে সে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে 'আমড়া' বিক্রি করছে—শুধুমাত্র সংসারের সহায়তা করতে।
কথা বলার একপর্যায়ে শিশুটি জানায়, তার মা-ই তাকে এসব ‘আমড়া’ প্যাকেট করে দিয়েছেন এবং বিক্রির দায়িত্ব দিয়েছেন। নিজের অর্জিত টাকাগুলো ব্যাগে রাখার সময় তার চোখে ছিল আত্মতৃপ্তি আর মুখে সেই চিরচেনা মুচকি হাসি।
বাস আসার পর যাত্রা শুরু হলেও, সেই শিশুটিকে আবারও দেখা গেল বাসে উঠে ডাক দিচ্ছে,
"আমড়া লাগবে, আমড়া"
একবার চোখ মেলতেই আবারও সেই মুচকি হাসি, যেন পরিচিত একজনকে দেখে স্বস্তি পেলো।
এক মুহূর্তে সে নেমে গেল অন্যদিকে, রেখে গেল এক অপূর্ব অনুভূতি আর সমাজের বাস্তবতার এক নিঃশব্দ চিত্র।
লেখা ছবি শোয়াইব কবির।