বদলির আদেশের পরও দোহাজারী রেঞ্জের মধু ছাড়তে চাইনা,ফরেস্টার মামুন মিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের অধীন পদুয়া রেঞ্জে কর্মরত ফরেস্টার মামুন মিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠার পর বন অধিদপ্তর কর্তৃক তাকে কোস্টাল (বরিশাল) অঞ্চলে বদলি করা হয়। তবে আদেশ জারির দীর্ঘ সময় পরেও তিনি আগের কর্মস্থলেই বহাল আছেন।জানা যায়, ওই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোল্লা রেজাউল করিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং বন বিভাগে আলোচিত একটি ‘চাঁদা সমন্বয়কারী বলয়ের’ সদস্য। এই প্রভাবের জোরেই প্রধান বন সংরক্ষকের (সিসিএফ) স্বাক্ষরিত বদলির আদেশও কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ।বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বদলি ঠেকাতে একটি শক্তিশালী মহল বন উপদেষ্টার মাধ্যমে সচিবালয়ে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য সচিবের ওপর ‘মনস্তাত্ত্বিক চাপ’ তৈরি করার অভিযোগও উঠেছে।স্থানীয়দের অভিযোগ,পদুয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন কালে রিজার্ভ বনভূমিতে গাছ পাচার, স’মিলে অবৈধ কাঠ সরবরাহ, বন মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়—এসব নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি এলেও, কার্যকর পদক্ষেপ নেই বন বিভাগের। সরকারি আদেশ অমান্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় (১৯৭৯) স্পষ্ট বলা আছে—“বদলি আদেশ মান্য না করলে তা গুরুতর অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।”বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আব্দুল্লা আল মামুন কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দায় সারা উত্তর প্রদান করেন। তবে জানা যায় ডিএফও নিজেই বদলী আদেশটি বাতিলের জন্য সুপারিশ করেছেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ বাতিল করার সুপারিশ কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩(খ) ও ৫ ধারা অনুযায়ী “প্রভাব বিস্তারমূলক অনুপযুক্ত আচরণ” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।সরকারি আদেশকে খাটো করে দেখার, ‘নিজস্ব বলয়’ তৈরি করে সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার এই প্রবণতা একটি দুঃখজনক উদাহরণ। এতে দুর্নীতির রোধ নয়, বরং প্রশ্রয় নিশ্চিত হয়।যেখানে বদলি হয় দায়িত্ববোধের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার জন্য, সেখানে আদেশ বাতিলের সুপারিশ আসলে প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করার বিপজ্জনক প্রবণতা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।একজন কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে যদি পুরো প্রশাসনিক কাঠামো নীরব থাকে, তবে প্রশ্ন ওঠে—প্রকৃত নিয়ন্ত্রক কে? নীতিনির্ধারক, না কি নেপথ্য প্রভাবশালী? বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা।